ডেস্ক রিপোর্ট – মানুষের যান্ত্রিক জীবনে জায়গা দখল করেছে পলিথিন ও প্লাস্টিক। পলিথিনের স্থায়িত্ব বেশি। সহজে পচন ও পুড়িয়ে ফেলা সম্ভব হয় না। অল্প বাজার সহজেই পলিথিনে বহন করা সম্ভব। কিন্তু কাজ শেষে পলিথিনের স্থান হয় ডাস্টবিনে।
আর সেই পরিত্যক্ত পলিথিনকে কাজে লাগিয়েছেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার ১৯ বছর বয়সী ইবনে শাহরিয়ার ইমন। পলিথিনকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় কাজে লাগিয়ে তা থেকে তৈরি করেছেন জ্বালানি পদার্থ, গ্যাস ও ফটোকপি মেশিনের কালি।
ইবনে শাহরিয়ার ইমন উপজেলার নুরুল্যাবাদের মীরপারার মোস্তাক আহম্মেদের ছেলে রাজশাহী শহীদ এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান সরকারি ডিগ্রী কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। তার বাবা পেশায় একজন কৃষক এবং মা আফরোজা বেগম একজন গৃহিনী। দুই বোন মোনালিসা আক্তার ভিয়া এবং নিশাত মনি মৌ স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী।
ইমন নিজস্ব প্রযুক্তিতে একটি তেল রিফাইনারি মেশিন তৈরি করেছেন। যা দিয়ে পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন এবং গ্যাস রিফাইনের পর আলাদা পাত্রে সংরক্ষণ করা সম্ভব। তার এ প্রতিভাকে এক নজর দেখতে বাড়িতে ভিড় করছেন এলাকার সব নারী-পুরুষ। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তার এ প্রতিভা বিকশিত করা সম্ভব বলে মনে করছেন এলাকাবাসি।
ইমন বলেন, এ ধরণের উদ্ভাবনের কথা আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইদের কাছে শুনেছি । বিষয়টি নিয়ে কয়েক মাস ধরেই ভাবছি। এরপর সেই ভাবনাকে আমি প্রাইলোসাইসিস প্রযুক্তিতে বাস্তবে রূপদান করি। মাত্র আট হাজার টাকা খরচ করে কাজ শুরু করি। প্রথম প্রথম সামান্য সমস্যা হলেও তা শুধরে নিয়ে আমি সাফল্য লাভ করেছি।
তিনি আরো বলেন, নোংরা ও পরিত্যক্ত পলিথিন, পুরাতন টায়ার-টিউব, প্লাস্টিকের বোতল এবং রাবার বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে তা কেটে টুকরো-টুকরো করে ড্রামের ভিতর ঢুকিয়ে দেই। এরপর বিশেষ প্রক্রিয়ায় পলিথিনগুলো ড্রামের নিচে খড়ি দিয়ে জ্বাল দেন।
এরপর ড্রাম থেকে নির্গত গ্যাস স্টিলের পাইপ দিয়ে এসে প্লাস্টিকের বোতলের মধ্যে জমা হচ্ছে। পলিথিন থেকে পেট্রল জাতীয় পদার্থ, ডিজেল,অকটেন,কেরোসিন এবং গ্যাস উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।
এ পেট্রোল এরইমধ্যে মোটরসাইকেলে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা হয়েছে। সব খরচ বাদ দিয়ে ৫০-৬০ টাকা লিটার হিসেবে বাজারজাত করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। তবে টাকার অভাবে আধুনিক যন্ত্র কেনা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
ইকবাল, মোস্তাক আহম্মেদ ভুট্টু,সাবিনা ইয়াসমিন, সাদেকুল ইসলাম এবং রিপন নামের স্থানীয়রা অনেকেই জানান, আমরা জানতাম পলিথিন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু এ পলিথিন থেকে যে জ্বালানি তেল তৈরি করা যায় সেটা জানতাম না। নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না।
মান্দার ইউএনও খন্দকার মুশফিকুর রহমান বলেন, ইমনের উদ্ভাবনের কথা শুনেছি। তবে এর কার্যকারিতা কতটা পরিবেশবান্ধব তা বলতে পারছি না। তবে তার এ উদ্ভাবনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে স্বাগত জানাই।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-